বর্তমানে পৃথিবীর পরিণত হয়েছে গ্লোবাল ভিলেজ। আগেকার মত এখন মানুষ আর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করার জন্য চিঠি আদান-প্রদান প্রধান করে না।
বর্তমানে তারা বেছে নিয়েছে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মাধ্যম কে। তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রযুক্তির ছোঁয়া পেয়েছি পৃথিবীর প্রায় সকল সেক্টর। তারই ধারাবাহিকতায় যোগাযোগের মাধ্যম ও হয়ে উঠেছে আধুনিক।
থাকে মানুষ সামাজিকতা রক্ষার জন্য নিজেদের মাঝে যোগাযোগ রাখত। এখনো মানুষ সামাজিকতা রাখার জন্য যোগাযোগ রক্ষা করে কিন্তু সেটি বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে।
সামাজিকতা রক্ষা;-
সমাজ মানেই হলো একসাথে সবাই বসবাস করা। আর বসবাস করতে গেলে নিজেদের মধ্যে ভাব আদান প্রদান করতে হয়। অর্থাৎ নিজেদের মাঝে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। সে প্রাচীন যুগ থেকেই মানুষ সমাজের সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছে। মানুষ আধুনিক হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির প্রসার পেয়েছে কার সাথে সাথে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যমে পরিবর্তন হয়েছে।
সামাজিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে এখন মানুষ আগের মত প্রাচীন কথা অবলম্বন করে না। আগে যেমন একটি গ্রামের সাথে আরেকটি গ্রামের যোগাযোগ রক্ষা করাটাই কঠিন ছিল বর্তমানে সেটি আর নেই। একদেশে বসে মানুষ অন্য দেশে বসবাস করে আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে।
এতে সময় এবং ব্যয় দুটোই বেচে যাচ্ছে। সামাজিকতা রক্ষার জন্য এখন বর্তমান বিশ্বে হাজার ওয়েবসাইটের দেখা মিলছে অহরহ।
ফেসবুক ;-
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম নিয়েছে তখন আর ফেসবুকের নাম। যদিও মার্ক জাকারবার্গ তাদের কলেজের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের জন্য ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছিল কিন্তু এখনকার সারা পৃথিবীব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রূপ নিয়েছে।
ফেসবুকের বদৌলতে আজ পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের খোঁজ খবর রাখা সম্ভব হচ্ছে। শুধু খোঁজখবর নাই তাদের সাথে ভিডিওবার্তা অডিও বার্তা ছবি কিংবা সরাসরি কথা বলা যাচ্ছে।
কয়েক যুগ আগেও যেখানে বিদেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনদের দেখাচ্ছিলো অসম্ভব একটি ব্যাপার বর্তমানে সেটি চোখের পলকে সম্ভব হচ্ছে। ভিডিও কলিং ছিলো এক সময়কার রূপকথার গল্প কিন্তু সেটি আজ বাস্তবে ধরা দিয়েছি আমাদের হাতে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা;-
আমাদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে নানান এপ্স ও ওয়েবসাইট আমাদের প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। সারাদিনে একবার যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘরে না আসলে হয়নি না। নিত্যদিনের সঙ্গী এখন এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্ক বজায় থাকে। পরিবারের সদস্য কিংবা আত্মীয়-স্বজন সবার সাথেই নিমেষেই যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে। অবাধে যোগাযোগের ফলে নিজেদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরো দৃঢ় হচ্ছে।
তাছাড়া তথ্য আদান প্রদানের জন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইউনিয়নের তথ্য উপাত্ত নিমিষেই আদান-প্রদান সম্ভব হচ্ছে। তথ্যের অবাধ বিচরণের জন্য মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় কাজের ক্ষেত্রে ভোগান্তিহীন জীবনযাপন সম্ভব হচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কাজ সমূহ ;
1. সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা।
2. তথ্য আদান প্রদান করা।
3. প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ছবি, অডিও বার্তা, ভিডিও বার্তা আদান প্রদান করা।
4. নিজেদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করা।
5. পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের মানসিক প্রশান্তি প্রদান ইত্যাদি
তাছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অনলাইনে তাদের পণ্য কেনাবেচা করছে। এতে করে বর্তমান যুব সমাজের জন্য নিজেদেরকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার একটি সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকাঃ
আমরা জানি বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক পণ্য কেনা-বেচা হয়ে থাকে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বর্তমান যুবসমাজ হয়ে উঠতে পারে উদ্যোক্তা। চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে তারা নিজেদের জ্ঞান এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠতে পারে একজন সফল উদ্যোক্তা।
তাছাড়া শুধু নিজের ইনভেসমেন্ট নয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে রিসেল করেও অর্থ উপার্জন সম্ভব হচ্ছে। অর্থাৎ নিজের দক্ষতা ও সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রাফিক ইউজ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য বিক্রি করে সেখান থেকে অর্থ উপার্জন সম্ভব হচ্ছে।
অর্থাৎ একটি ফোন থাকলে কোন ইনভেস্টমেন্ট ছাড়াই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেও অর্থ উপার্জন সম্ভব হচ্ছে।
বর্তমানে সবচেয়ে বিশাল ট্রাফিক হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কে ধরা হয়। সেই হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের প্রতি মানুষ এরকম বিশাল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বর্জনীয় দিক সমুহ;
আমাদের সমাজে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগই কাল হয়ে উঠেছে উঠতি বয়সী তরুণদের জন্য। অনেক সময় দেখা যায় সামান্য কিছু ফলোয়ার এবং লাইকের আশায় উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীরা মেতে ওঠে গ্যাং কালচারে। যার ফলে আমরা অহরহ দেখতে পাই তারা মেতে ওঠে মাদক কিংবা অস্ত্রের মহড়া দিতে। আরে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু লোক তাদের বিপথে ধাবিত করছে।
বিভিন্ন অপরাধে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে ঢাল হিসেবে। সমাজের বিশৃংখলার মূলেও রয়েছে এই কারন গুলো।উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা যেমন হিংসাত্মক হয়। আর এই সুযোগে তাদের এই ধ্বংসাত্মক স্বভাবটাকে কাজে লাগিয়ে সমাজের প্রভাবশালী কিছু লোকজন তাদের দিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করে নিচ্ছে।
বর্তমানে আমরা খবরের কাগজ কিংবা নিউজ চ্যানেলগুলোতে দেখতে পাচ্ছি টিকটকের নেশায় অনেক তরুণ মাদক অস্ত্র কিংবা নারী পাচারের মত জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়েছে। সরকারের উচিত এখনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লাগাম টেনে ধরা। আর অভিভাবকদের করণীয় তাদের সন্তান গ্যাং কালচারের সাথে যুক্ত আছে কিনা তা প্রত্যক্ষ করা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সরকারের প্রত্যক্ষ এবং প্ররোক্ষ নজরদারি প্রয়োজন।
বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি না পড়তে বসে তরুণেরা ফলোর এবং লাইকের আশায় অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে কিংবা মাদকের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করছে। অন্যদিকে মেয়েরা ঝুকে যাচ্ছে অশ্লীলতার দিকে। এতে পড়া সমাজে নারী কেলেঙ্কারি ও অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে। মাদকের ব্যবহার হয়ে উঠেছে ডাল ভাতের মত। তাই সরকারের প্রয়োজন প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর নজরদারি ও মনিটরিং করা। গোয়েন্দাদের তৎপরতায় কিছুটা হলেও কমতে পারে সামাজিক ব্যাধি।
অভিভাবকদের করণীয় ;-
অভিবাবকদের উচিত তাদের সন্তানরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কি করছে তা বিচার বিশ্লেষণ করা। তাদের সন্তানেরা গ্যাং কালচার কিংবা মাদকের সাথে যুক্ত হলো কিনা তার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অভিভাবকেরা রাখতে পারে অসীমের অবদান। সামাজিক ব্যাধি তে পরিনত হওয়ার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কে সমাজের অনুকূলে নিয়ে আসতে হবে।
তার জন্য আপনার আমার সবারই কিছু না কিছু করনীয় কাজ আছে। সমাজের সবাই সবার জায়গা থেকে খারাপ জিনিসগুলো পরিহার করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে উঠবে সমাজের জন্য কল্যাণকর একটি জিনিস।
সমাজের করনীয় ;-
সমাজের করনীয় হচ্ছে সমাজের কোন তরুন বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে তা চিহ্নিত করে তাদেরকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসার জন্য যা যা করণীয় তা করা। সমাজে কোন তরুণ গ্যাং কালচারে কিংবা মাদক এর সাথে জড়িয়ে পড়ল তা চিহ্নিত করে প্রতিরোধ গড়ে তোলা অন্যদিকে কোন মেয়ে অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়লে তাকে সঠিক পথ দেখানো।
সমাজের সবাই যদি সবার জায়গা থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলে সামাজিক এই সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব।
সমাজেএ লোকজন চাইলেই সমাজের এই ব্যধিগুলো থেকে মুক্তি সম্ভব। সমাজে সবারই ভাই বন্ধু আছে তারাই পারে শুধু কিশোরদের থেকে এসব দূরে রাখতে।
খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা এখন অতিব জরুরি।
বর্তমানে আমাদের দেশে খেলার মাঠ নেই বললেই চলে। সুস্থ বিনোদনের অভাবে ছেলে মেয়েরা ঘর মুখো হচ্ছে। আর সেই সাথে তারা বিনোদনের জন্য বেছে নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কে।
আমরা সবাই চাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ বিনোদনের মধ্য দিয়ে বড় করে তুলতে। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়ে উঠেছে না শুধু খেলাধুলার জায়গার অভাবে। সুস্থ বিনোদন চর্চা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ বিনোদন দিতে না পারলে তাদের কাছ থেকে আমরা এর চেয়ে বেশি কি আশা করতে পারি। তাই সমাজের সবার উচিৎ পাড়া মহল্লায় দেখার মাঠ হড়ে তুলা।
সুস্থ ও সামাজিক বিনোদনই পারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খারাপ এই প্রভাব থেকে সমাজ কে রক্ষা করতে।
0 Comments